আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাসী?

 
Do you believe in God?
ভগবান বিশ্বাস করেন? 



 পৃথিবীতে বিভিন্ন জাতি ধর্মের মানুষ আছে, প্রত্যেক জাতি বা ধর্মের মানুষ কোন না কোন কিছুর উপাসনা করে, হিন্দুদের ভাষায় তাকে ভগবান বলা হয়, অর্থাৎ সমস্ত জাতির মানুষ ভগবানে বিশ্বাসী। পৃথিবীর প্রায় সমস্ত ধর্মের মানুষের মধ্যে, কোন না কোন আত্মজ্ঞানী মহাপুরুষের আবির্ভাব হয়েছিল, তারা ঈশ্বর উপলব্ধি করে সাধারণ মানুষের জন্য গভীর ঈশ্বরীয় তত্ত্ব আলোচনা করে গেছেন, যাতে মানুষ এই জ্ঞানের মাধ্যমে নিজেদের এই প্রকৃতির মাঝে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারে। পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই ঈশ্বরে বিশ্বাসী, কিন্তু ঈশ্বর বিশ্বাস করবার থেকেও বেশি প্রয়োজন ঈশ্বরকে উপলব্ধি করা। ভারতের যুবক সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ বলে গেছেন, তুমি ঈশ্বরকে দেখিয়াছো, তুমি ঈশ্বরকে উপলব্ধি করিয়াছো, যদি না দেখো, যদি না উপলব্ধি করো, তাহলে তোমার ঈশ্বর সম্বন্ধে বলিবার কোন অধিকার তোমার নাই। সকলে বিশ্বাস করে তাই তুমিও বিশ্বাস করো, এমন বিশ্বাসের থেকে বিশ্বাস না করা অনেক শ্রেয়, ভন্ড হওয়ার চেয়ে নাস্তিক হওয়া অনেক ভালো। ঈশ্বরকে উপলব্ধি করবার অনেক পথ আছে তাই রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলে গেছেন যতমত ততপথ তিনি নিজে ভক্তির মাধ্যমে ঈশ্বরকে উপলব্ধি করেছেন এবং সাধারন মানুষদের সহজ সরলভাবে জীবনযাপন করবার নির্দেশ দিয়েছেন। বিবেকানন্দ ভক্তি ও জ্ঞানের মাধ্যমে ঈশ্বর উপলব্ধি করেছেন, তিনি প্রতিটি জীবের মধ্যেই ঈশ্বর কে দেখেছেন, তাই তিনি বলে গেছেন যথাযথ তথা শিব, জীবে দয়া করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর। মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির কে প্রশ্ন করেছিলেন, তুমি প্রতিদিন সূর্যদেবকে প্রণাম ও জল অর্পণ করো কেন? ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির সহজ সরলভাবে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, যুধিষ্ঠির বলেন, সূর্য আমাদের আলো দেয়, তাপ দেয়, সূর্য সৃষ্টির উৎস, তিনি মহান, আর যা কিছু মহান আছে তাকে শ্রদ্ধা করা ভক্তি করা আমার স্বভাব, এই ভক্তির মাধ্যমে আমার মনের কলুষতা দূর হয় মন পবিত্র হয়। তাহলে তিনি সূর্যদেবকে খুশি করে তার থেকে কোন কিছু প্রাপ্তির আশায় সূর্যদেবকে প্রণাম করেননি, এটা নিজের মনকে পবিত্র রাখবার একটি কর্ম মাত্র। আধ্যাত্ম পথ অনুসরণ করবার জন্য আত্মজ্ঞানই মহাপুরুষরা এই ধরনের বহু কর্ম আমাদের অনুসরণ করতে বলে গেছে। ভগবান গৌতম বুদ্ধ অষ্টাঙ্গিক মার্গ অর্থাৎ আট রকম কর্ম পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলেছেন। 

১. সম্যক দৃষ্টি 

২. সম্যক সংকল্প 

৩. সম্যক বাক্য 

৪. সম্যক কর্ম 

৫. সম্যক জীবিকা 

৬. সম্যক প্রযত্ন 

৭. সম্যক স্মৃতি 

৮. সম্যক সমাধি

তিনি ধ্যানের মাধ্যমে বুদ্ধত্ব লাভ করেছেন, ভগবান গৌতম বুদ্ধ মনের স্থিরতা স্বভাবে শান্ত এবং মনকে কোন প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। জীবনের কর্ম সঠিক না হলে মনের স্থিরতা শান্ত স্বভাব মনকে প্রভাবমুক্ত রাখা কখনোই সম্ভব নয়। গুরুচাঁদ ঠাকুর বলেছেন সদা সৎ পথে রবে সত্য কথা কবে পরধন পরস্ত্রী কভু না স্পর্শিবে তুমি না ডাকিলেও হরি তোমাকে ডাকিবে। অর্থাৎ কর্ম যদি সঠিক হয় সে ভক্ত নাহলেও সে আধ্যাত্মের পথই অনুসরন করছে। মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন হে পার্থ মনকে স্থির করো তখন অর্জুন বলেন হে মাধব মন বায়ুর থেকেও গতিশীল বায়ু কে স্থির করা সম্ভব হলেও মনকে স্থির করা সম্ভব হচ্ছে না কেউ যেন মনকে বশ করে আমাকে প্রভাবিত করছে তার ইচ্ছা মতো পরিচালিত করছে। কেন এমন হচ্ছে? ভগবান বলেন অন্য কেউ নয় তোমারই ইন্দ্রিয় গন তোমাকে প্রভাবিত করছে ঘ্রাণ স্পর্শন শ্রবণ-দর্শন আস্বাদন এরা বশীভুত হলে মন স্থির হবে, এদের বশীভুত করতে হলে দৈনন্দিন জীবনে এই ইন্দ্রিয় গণের কর্ম সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হবে। তবেই মন দ্বারা ইন্দ্রিয়দের নিয়ন্ত্রণ করে মনকে স্থির করা যাবে। অর্থাৎ সমস্ত কিছু নিজেদের কর্মের মাধ্যমে করতে হবে। প্রত্যেক মানুষের ভগবানের প্রতি বিশ্বাস রেখে সঠিকভাবে কর্ম করা উচিৎ। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন কর্ম করে যাও ফলের আসা করোনা, কিন্তু কর্ম ফল পেতেই হবে কোন কর্মই ফল বিহীন নয়। আমরা আজ পর্যন্ত যা কিছু প্রাপ্ত করছি সবই কর্মের ফল, যেকোন ফল প্রাপ্তি কোনো না কোনো কর্মের কারণেই হচ্ছে। নিজের কর্ম, অপরের কর্ম, সমাজের কর্ম, প্রকৃতির কর্ম, প্রকৃতির সমস্ত জীবের কর্ম, এই সমস্ত কর্ম একত্রিত হয়েও ফল প্রদান করে। যারা কর্ম ফলের বিষয়ে সচেতন তারা সচেতন হয়েই সমস্ত কর্ম করে, কোন ভুল হয়ে গেলে সংশোধনও করে কারণ তারা জানে যে আজ কোনো ভুল ভবিষ্যতে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। যেমন ছোট্ট বীজ ভবিষ্যতে বিশাল বৃক্ষ উৎপন্ন করে। তার ফলও কেউ না কেউ ভোগ করে। তাহলে আমরা যদি জীবনে সঠিকভাবে কর্ম করে ঈশ্বরের বিশ্বাস করি বা ঈশ্বরের বিশ্বাস করে সঠিকভাবে কর্ম করি তবে আমরা খুব সহজ সরলভাবে ভাবে জীবন যাপন করেও আধ্যাত্মিক পথ অনুসরণ করতে ও ঈশ্বর উপলব্ধি করতে পারি। ঈশ্বরের আশির্বাদও সর্বদা আমাদের উপর বজায় থাকবে। কিন্তু যদি ভুল কর্ম করে পাপ দুর করতে বা কোনো কিছু প্রাপ্তির আশায়, বা ভয়ের কারণে ভগবানের ভক্তি করি পুজোকরি তাকে বিশ্বাস করি বলা যায় না, বরং ভগবানের প্রতি সন্ধ্যেয় সৃষ্টি হয়, মনপূত ফল প্রাপ্তি না হলে তখন মনে সংশয় হয় যে ভগবান আছেতো? আর সংশয় কখনোই বিশ্বাস হতে পারেনা। তাদের মনে সংশয়ের কারণ তারা কেউ ঈশ্বর উপলব্ধি করেননি। যেমন ধরুন কোনো নাস্তিক ব্যক্তি সমস্ত জীবন ঈশ্বরের বিরুদ্ধ আচরণ করেছেন, বিপরীতে অন্য একজন ধার্মিক ব্যক্তি সমস্ত জীবন ঈশ্বরের পুজো পাঠ গুন কীর্তন করছেন। শেষ জীবনে দুজনের মনে সংশয় সৃষ্টি হলো সমস্ত জীবন যা কিছু করছি তা ভুল ছিল নাতো? অর্থাৎ নাস্তিক মানুষ মনে করছেন সর্বদা ভগবানের নিন্দা মন্দ করে গেলাম যদি ভগবান থাকে তাহলে আমার কি অবস্থা হবে এই সংশয় তার মনে ভয় উৎপন্ন করছে, অপর দিকে ধার্মিক মানুষ মনে করছেন সারা জীবন মূর্তিকে ভগবান ভেবে পুজো করে তার গুন কির্তন করে অন্যদের মতো জীবন উপভোগ করতে পারলাম না, কিন্তু যদি ভগবান না থাকে তাহলে আমার সমস্ত জীবনই বৃথা, এই সংশয় তার মনে দুঃখ উৎপন্ন করছে। এই দুজনের একজনকেও ঈশ্বরে বিশ্বাসী বলা যাবে না। কারন নাস্তিক মানুষটা জানেই না যে সে কি অবিশ্বাস করছে, তেমনই ধার্মিক মানুষটিও জানেনা সে কি বিশ্বাস করছে। এই ধরনের বিশ্বাস ও অবিশ্বাস একই বিষয়। সুতরাং ঈশ্বরে বিশ্বাস ভক্তি করার সাথে ঈশ্বর অনুভূতি, উপলব্ধি, ঈশ্বর দর্শন করতে হবে। ঈশ্বরকে না জানলে ঈশ্বরে বিশ্বাস আসবে না, ঈশ্বরে বিশ্বাসী না হইলে, ঈশ্বর অনুভূতি হবে না, অনুভূতি না হইলে উপলব্ধি হবে না, উপলব্ধি না হলে ঈশ্বর দর্শন হবে না। আত্মজ্ঞানী মহামানবেরা ঈশ্বর উপলব্ধি করে, যে কর্মের মাধ্যমে জীবন চলার পথ অনুসরণ করতে বলে গেছেন সেই কর্ম করে পথ অনুসরণ করে আমরা ঈশ্বরকে জানতে পারি। ঈশ্বর বিশ্বাস করার থেকেও ঈশ্বরকে জানবার প্রয়োজন বেশি। ঈশ্বর উপলব্ধি হলে এই প্রকৃতির সুন্দর্য আরো ভালো ভাবে উপভোগ করতে পারা যাবে, মন আনন্দে পরিপূর্ণ হবে, আত্মা তৃপ্ত হবে। প্রকৃতি সব সময়ই সুন্দর, শুধু আমাদের কাম, ক্রোধ, লালসা, ঈর্ষা, মনের অস্থিরতার কারণে, প্রকৃতির বিরুদ্ধ আচরন করে আমরা অনুভব করতে পারি না। 

ঈশ্বর সকলের মঙ্গল করুন 


Astrolger 

Dr.Prodyut Acharya 

Contact +91 9333122768 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধারণ করার আগেই জেনে নিন মুক্তা কাদের জন্য শুভ, কাদের জন্য অশুভ?

পোখরাজ রত্ন: এর বৈশিষ্ট্য, মূল্য, জ্যোতিষ ফলাফল, উৎপত্তি, রঙ ও অর্থ

রাশি চক্রে 12 টি রাশি ও বছরে 12 মাস কেন?